এসআই সার্জেন্ট ও কনস্টেবল পদে নিয়োগ সংস্কার।

বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল, সার্জেন্ট ও এসআই পদে নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষায় ব্যাপক সংস্কার আনা হচ্ছে। নিয়োগবিধিতে (পিআর, ১৯৪৩-এর প্রবিধিধান-৭৪১)গুরুত্বপূর্ণ অনেক সংশোধনী আসছে যাতে নিয়োগের সময় অধিকতর যোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করা সম্ভব হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রস্তাব পর্যালোচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখার ভেটিংও সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সচিব কমিটির সভায় পুলিশ নিয়োগবিধি সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ সভা থেকে প্রস্তাব অনুমোদন চূড়ান্ত হলে সংশোধনী আনার বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করা হবে।

এসআই সার্জেন্ট ও কনস্টেবল পদে নিয়োগ সংস্কার।

উল্লেখযোগ্য সংশোধনী :
এসআই (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগের জন্য বর্তমান বিধি অনুযায়ী পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নিয়োগের ব্যবস্থা করবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারী যদি নিজ জেলা অফিসে আবেদন সময়মতো পৌঁছাতে না পারেন, তাহলে উপপুলিশ প্রধান রেঞ্জেস আবেদন গ্রহণ করবেন।
সংশোধিত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে (প্রবিধানের সি (১) এর বিধিতে), নিয়োগের জন্য পুলিশের নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ১টি ইংরেজি ও ২টি বাংলা দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পুলিশ সদর দপ্তর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এসআই পদের জন্য দরখাস্ত করতে হবে।
আবেদনকারীর উচ্চতা বিবেচনায় ৪৫%, এসএসসি বা সমমান হতে ১৫%, এইচএসসি বা সমমান হতে ১৫% এবং ডিগ্রি অথবা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতাধারীদের মধ্য থেকে বাকি ২৫% নেওয়া হবে। পুলিশ সদর দপ্তর যোগ্য প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে। তবে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকৃত শূন্যপদের চেয়ে ৫ গুণের বেশি হবে না। এ তালিকা থেকে কেবল সেসব প্রার্থীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।
সি(২) বিধিতে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু বলা আছে শারীরিক মাপ এবং শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষার বিষয়ে। একই সাথে বিস্তারিত আকারে বলা হয়েছে সংশোধন প্রস্তাবে। যেমন, শারীরিক মাপ নেওয়া হবে শুধুমাত্র উপপুলিশ মহাপরিদর্শক রেঞ্জেস কর্তৃক। এর মধ্যে উচ্চতা, বুক, ওজন ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, সহনশীলতা পরীক্ষা এবং প্রচলিত দৌড় (৭ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে পুরুষ ১৬০০ মিটার, মহিলা ৭ মিনিটের মধ্যে ১০০০ মিটার)।
দীর্ঘ লাফের ক্ষেত্রে (মহিলা ২.৫ ফুট এবং পুরুষ-৩.৫ ফুট ), উপরে তুলে ধরার ক্ষেত্রে হতে হবে (মহিলা ৩০ সেকেন্ডে ১০ বার এবং পুরুষ-৪০ সেকেন্ডে ১৫ বার), সিট অ্যাপস এর ক্ষেত্রে চলবে (মহিলা ৩০ সেকেন্ডে ১০ বার এবং পুরুষ ৪০ সেকেন্ডে ১৫ বার), টানা (পুরুষ ৩০ ফুট ১৬০ পাউন্ড, মহিলা ২০ ফুট ১২০ পাউন্ড) এবং দড়ি বেয়ে উপরে ওঠা (পুরুষ ১২ ফুট এবং মহিলা প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৮ ফুট। এছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ অনুসারে লিখিত ও শারীরিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।
সুত্রঃ বাংলাদেশ পুলিশ ওয়েবসাইট।
রোমান চিহ্নের ৪নং বিধির সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সারাদেশে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এসপি পদের নিচে নয়-এমন কর্মকর্তাদের দিয়ে পুলিশ সদর প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করবে। যেখানে ১০০ নম্বরের পৃথক দুটি প্রশ্নপত্র থাকবে। পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় থাকবে ৩ ঘণ্টা। পরীক্ষায় থাকবে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণজ্ঞান ও অঙ্ক বিষয়ের উপর প্রশ্ন।
এছাড়া ৫০ নম্বরের মানসিক পরীক্ষাও থাকছে। এসপি পদমর্যাদার নিচে নয়-এমন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফলাফল শিট প্রস্তুত করে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ৫নং বিধির প্রস্তাবে আছে-নির্বাচিত আবেদনকারীদের মধ্যে যিনি ৫০% পাশ নম্বর সুরক্ষিত করতে সক্ষম হবেন অথবা প্রতি বিষয়ে তদূর্ধ্ব নম্বর পাবেন, তাদের নামের লিস্ট নির্দিষ্ট উপপুলিশ মহাপরিদর্শক রেঞ্জেসের মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হবে।
এরপর পুলিশ সদর দপ্তর ওই প্রার্থীদের কম্পিউটারের উপর পরীক্ষা নেবে। এতে এমএস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল, এমএস পাওয়ারপয়েন্ট, ওয়েব ব্রাউজিং এবং এর সমস্যা সমাধানের ওপর বিস্তারিত পরীক্ষা নেবে। যিনি এক বা একাধিক বোর্ড পরীক্ষায় কম্পিউটার টেস্টে পাশ করবেন, পরবর্তী সময়ে তাকে পুলিশ মহাপরিদর্শক প্রবণতা পরীক্ষা এবং কণ্ঠস্বরের মৌখিক নেওয়া হবে। এতে প্রবণতা পরীক্ষার নম্বর ২৫, কণ্ঠস্বর পরীক্ষার নস্বর ২৫ এবং যার পাশ নম্বর থাকবে ২৫।
জি(৬) এর বিধি অনুসারে বলা হয়েছে, নির্বাচিত কোনো ব্যক্তি সর্বনিম্ন ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হতে হবে। একই সাথে বুকের মাপ হতে হবে ৩২ ইঞ্চি সাধারণ এবং বর্ধিতকরণ ৩৪। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং ওজন অনুমোদিত মাপ অনুসারে হতে হবে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পিআর হচ্ছে, এসআই নিয়োগের মতো একই ধরনের সংশোধনী হতে হবে এমনটাই বলা হয়েছে ১৯৪৩-এর প্রবিধান ৭৩৯-এর সংশোধন প্রস্তাবে।
বাংলাদেশ ট্রেনিং রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ ক্ষেত্রের সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসএসসি এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এবং নিয়োগ পদ্ধতি অনুসা্রে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। ৫০% নেওয়া হবে এসএসসি পাশ সনদের ভিত্তিতে এবং বাকি ৫০% উচ্চতার ভিত্তিতে নিতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শারীরিক ধৈর্য পরীক্ষার জন্য যোগ্য প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করা হবে, যা প্রকৃত শূন্যপদের ৫ গুণের কম হবে না। প্রার্থী তার নিজ নিজ জেলার পুলিশ লাইনে নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত থাকবেন।
নিয়োগ টিম উচ্চতা, বুকের মাপ এবং ওজনের মাপকাঠি গ্রহণ করবে। পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করবেন। শারীরিক পরীক্ষায় পুরুষ প্রার্থীকে ২৮ সেকেন্ডে ২০০ মিটার এবং ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে ১৬০০ মিটার অতিক্রম করতে হবে।
৩৪ সেকেন্ডে ২০০ মিটা্র এবং ৬ মিনিটে ১০০০ মিটার অতিক্রম করতে হবে মহিলা প্রার্থীর ক্ষেত্রে। উচ্চ লাফে মহিলাদের ক্ষেত্রে ২.৫ ফুট এবং পুরুষদের ৩.৫ ফুট হতে হবে। লম্বা লাফে মহিলা প্রার্থীকে ৬ ফুট এবং পুরুষ ১০ ফুট যেতে হবে। দড়িতে আরোহণের ক্ষেত্রে পুরুষ ১২ ফুট এবং মহিলা ৮ ফুট। পুশ আপ পুরুষ ৩৫ সেকেন্ড ১৫ বার এবং ৩০ সেকেন্ড ১০ বার প্রভৃতি।
৪৫ নম্বরের উপর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে আবেদনকারীদের। এই পরীক্ষাতে থাকবে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক ও সাধারণজ্ঞানের প্রশ্নসমূহ। প্রার্থীদের মধ্যে যারা ৫০% বা তদূর্ধ্ব নম্বর অর্জন করতে সক্ষম হবেন, শুধুমাত্র তাদেরকেই ১৫ নম্বরের মৌখিক ও কণ্ঠস্বর পরীক্ষায় ডাকা হবে।
বাংলাদেশ পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩-এর প্রবিধিধান-৭৪৬ (৪)-এর সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র পুরুষ প্রার্থীর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং বুকের মাপ ৩১ ইঞ্চি সাধারণ এবং বর্ধিকরণের ক্ষেত্রে ৩৩ ইঞ্চি থাকতে হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির নিচে নয় এবং বুকের মাপসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মাপের নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
নিয়োগবিধি সংশোধনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এর আগেও সময়ে সময়ে নিয়োগবিধি সংশোধন হয়েছে। তবে এবারের সংশোধন ব্যাপক ও সময়োপযোগী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে তদবিরের প্রভাব কমিয়ে অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে আরও কঠিন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কেউ যোগ্য হলেই তাকে পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে না। আবেদনপত্র বাছাইয়ের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতায় যারা বেশি এগিয়ে, তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এভাবে নিয়োগের প্রতিটি ধাপে অধিকতর যোগ্যদের বাছাই করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top